আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দমনমূলক কৌশল ও নতুন আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করছে সরকার। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, ভিন্ন মত পোষণকারীদের সুরক্ষা অথবা হুমকিদাতা সশস্ত্র দায়ী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
‘দমন-পীড়ন এবং ভয়ের ফাঁদে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক অ্যামনেস্টি ওই প্রতিবেদনে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কীভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে এবং হাই প্রোফাইল সেক্যুলার ব্লগারদের হত্যা করছে সেবিষয়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছে। গত চার বছরে বাংলাদেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের মাত্র একটি মামলার রায় এসেছে।
আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংস্থা বলছে, অ্যাক্টিভিস্টরা নিয়মিত হত্যার হুমকি পাচ্ছেন, কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা না দেয়ায় অনেকেই নিজের নিরাপত্তার জন্য দেশত্যাগ করতেও বাধ্য হয়েছেন। সরকারের সমালোচনা, বিতর্ক এবং বিরুদ্ধ মত দমন তীব্র করা হয় গত বছর। গণমাধ্যম কর্মীদের হয়রানি, কাজে হস্তক্ষেপ এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অভিযোগ আনছে সরকার।
‘সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মধ্যে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ কণ্ঠস্বর ক্রমাগত নীরব হয়ে পড়ছে। সরকার শুধু মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়নি; বরং ব্লগার এবং সাংবাদিকরা যে হুমকির মুখোমুখি হয়েছে; সেজন্য দমনমূলক আইনের মাধ্যমে তাদেরকেই দায়ী করা হচ্ছে’- বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষক ওলফ ব্লমকভিস্ট।
অ্যামনেস্টি বলছে, গত বছরের এপ্রিলে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়; বাংলাদেশ সরকার এজন্য এই ব্লগারকেই দোষারোপ করেছে।
তার লেখায় আপিত্তকর বিষয় যাচাইয়ে পুলিশ তদন্ত করবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিন্ন কথা বলেছেন বলে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্য কয়েকটি ঘটনায় অ্যাক্টিভিস্টরা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেছেন, তারা যে হুমকি পেয়েছেন সেই অভিযোগ আমলে নিতে অস্বীকার করেছে পুলিশ। পৃথক ঘটনায় অ্যাক্টিভিস্টদেরকে দেশত্যাগ করা উচিত বলেও পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। এমনকি সেক্যুলার বিষয়ে লেখালেখির কারণে পুলিশও তাদের হয়রানি করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মোবাইল ফোনে এক ডজনেরও বেশি হুমকি পেয়েছেন এমন একজন সেক্যুলার ব্লগারের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি বলছে, আমি বেশ কয়েকবার সহায়তা নেয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা আমাকে মুখের ওপর সহায়তা দিতে অস্বীকার করেছে।
অপর দিকে হামলাকারীরা প্রায় পুরোপুরি দায়মুক্তি উপভোগ করছেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মাত্র একটি হত্যা মামলার রায় এসেছে। হামলায় জড়িত আনসার আল ইসলামের ৮ সদস্যের সাজা দেয়া হয়েছে ওই রায়ে।
এর ফলে বাংলাদেশের এক সময়ের স্বাধীন সুশীল সমাজের মাঝে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে, যারা এখন সেলফ-সেন্সরশিপের আশ্রয় নিয়েছেন।
১৯৯১ সালে সামরিক শাসন থেকে বেরিয়ে আসার পর বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দমন-পীড়ন সহ্য করছেন বলে অ্যামনেস্টির সঙ্গে আলাপকালে সাংবাদিকরা জানিয়েছেন। বর্তমানে এটি শেষ সীমায় পৌঁছেছে; এর ভয়ে সাংবাদিকরা এখন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন।
ওলফ ব্লমকভিস্ট বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার সাংবাদিকতাকে এমনভাবে দেখছে যেন এটি এক ধরনের অপরাধ। কারাদণ্ড, হুমকি, ভীতি প্রদর্শন, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাজে হস্তক্ষেপসহ গণমাধ্যমে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বর নীরব করতে বাংলাদেশ সরকার সবকিছুই করছে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।